রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

দু’দন্ড আশ্রয় দিয়েছিল রমনা

ছাব্বিশ জানুয়ারি, দুই হাজার ষোল। মাত্র দু’দিন আগে একুশে টেলিভিশন ছেড়েছি। বেকার জীবন। বাবা অসুস্থ। মাথার ওপর অনেক দায় দায়িত্ব। পরিবারের কেউ জানে না আমি চাকুরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। আমার মতন আরো অনেকেই বাধ্য হয়ে চাকুরি ছেড়েছে। আমাদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অন্ধকার ফুড়ে আলো আসবে কিনা কেউ জানি না!

- Advertisement -

প্রতিদিনের মতন সকালে অফিস যাবার জন্য বাসায় থেকে বের হই। সবাই জানে অফিস যাচ্ছি। কিন্তু ঢাকায় বাস থেকে নেমে পল্টন থেকে হেঁটে হেঁটে রমনাপার্ক যাই। কাকরাইল মসজিদের পিছনে পার্কের এদিকটা নিরিবিলি। ছাতিমতলা বা বড় কোন নাম না জানা বৃক্ষের নীচের নিঃসঙ্গ বেঞ্চিতে শুয়ে বসে  সারাটা দুপুর, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা অবধি কেটে যেত। মনের ভেতর থাকত সাতপাঁচ ভাবনা। আমার আগামীদিনগুলো কি হবে, কিভাবে চলবো, নানান দু:শ্চিন্তায় একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যেতাম। ডালপালা আর পাতার ফাঁকফোকড় গলে রোদ এসে পড়তো মুখের ওপর।

চরম দুর্দিনে অনেকে যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তখন রমনার বৃক্ষরাজি আমাকে আপন করে নিয়েছিল। তারা  ছায়া দিয়ে পরম মমতায় আমাকে বেঞ্চিতে আশ্রয় দিয়েছে। টানা তিনমাস ঝড় বৃষ্টি রোদমেখে সারাদিনমান রমনায় কেটেছে। টাকার অভাবে কতদিন দুপুরে না খেয়ে বেঞ্চিতে শুয়েছিলাম!

কখনো ক্ষুধা নিবারণে রমনা হতে হেঁটে হেঁটে চলে গেছি রাজমনি সিনেমা হলের পিছনে সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে। সেখানে চট দিয়ে ঘেরা ফুটপাতের হোটেলে ১০ টাকায় রুটি,ভাজি খেয়ে অমৃত স্বাদ পেয়েছি।

রমনার চারপাশে সেগুনবাগিচা,পল্টন,বিজয়নগর, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউর ওপর আমার কত বন্ধুর অফিস,কত বড় বড় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এক সময় তারা মুখিয়ে থাকত আমার সঙ্গ পেতে,   আড্ডা দিতে বা এক কাপ চা খেতে যেন যাই। তখন ব্যস্ততায় যেতে পারিনি। অথচ বেকার জীবনে অফুরন্ত সময় থাকার পরও এক মুহুর্তের জন্য যাইনি। বলা ভাল যেতে চাইনি। শেষ পর্যন্ত কারো কাছে  যাইনি।

ঢাকা শহরে এ পার্ক আমার দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। ভালবেসে দু’দন্ড বসার সুযোগ দিয়েছে।

এমন বিপদের বন্ধুকে কৃতজ্ঞতা ও নিরন্তর শুভেচ্ছা।

মন্ট্রিয়ল, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent