শুক্রবার - মে ৩ - ২০২৪

যখন বদলি হলাম

বদলী হয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে এলাম

একদিন বদলী হয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে এলাম। সেটা ছিলো ১৯৯৪ সালের জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহ। এ বদলীটা ছিলো বদল এর মতো অর্থাৎ একজন অন্যজনের স্থলাভিষিক্ত হলো। এখানে এসে আরএমও কোয়ার্টারে উঠলাম। পরদিন অফিসে গেলাম। কাজ শুরু করলাম কিন্তু অফিসিয়ালী যোগদান করতে পারলাম না অফিসে।

আগে থেকে অনুমান ছিলো যে এই হাসপাতালে আমার অবস্থান সুখকর হবেনা। এই হাসপাতাল অনেক বড় এবং এখানে ডাক্তার ও ষ্টাফ বেশী। সিভিল সার্জনের পর এখানে একজন অভিভাবক ছিলেন তিনি সিনিয়র চিকিৎসক এবং সুপারইনটেনডেন্ট এর দায়িত্বপ্রাপ্ত। প্রথম থেকেই বিভ্রান্ত হতে শুরু করলাম। প্রতিদিন বেলা ১১টায় সুপার সাহেব মিটিং ডাকেন। সেখানে সহকর্মী যাদের পাই তা সবই তার লোক। কথাবার্তা যা হয় তাতে মনে হয় এ হাসপাতালের রাখাল আমি।

- Advertisement -

আরএমও এর বাসার টেলিফোনটি খুলে আগেই সরিয়ে নেয়া হয়েছে শুধু লাইনটি সরানো হয়নি অজানা কারনে। ২৪ ঘন্টাই আমাকে ষ্টান্ড বাই থাকতে হয় কাজেই টেলিফোনটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকলাম। মিটিং এ প্রায়ই আলোচনা হয় যে টেলিফোনটি আরএমও এর নয় তাই সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আমাকে বলা হলো যে বর্হিবিভাগের যে টিকেট দেয়া হয় তাতে প্রতিদিন সই করতে হবে যাতে তা চুরি না হয়। এটি unusual, সে সময় একটি টিকেট এর মূল্য ৭৫ পয়সার মতো ছিলো এর জন্য ৩০০ টিকেটে প্রতিদিন বিকালে ১/২ ঘন্টা ধরে সাইন করতে হতো। হাসপাতালের পুকুর আর গাছের হিসাবের দায়িত্ব আমার। রোগীদের ঔষধ পথ্য ও খাবারের দায়িত্বও আমার। এ সবই সুপার সাহেবের বন্টন করা।

এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল অথচ কাগজ কলমে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হলোনা। সুপার সাহেবের ইঙ্গিতে এগুলি হচ্ছে। বিদায়ী আরএমও যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন কাগজে কলমে তিনি ছুটি নিয়ে বাইরে আছেন তার পরিবর্তে যিনি দায়িত্বে আছেন তার কথা হলো আমি নতুন আর এমও কে চার্জ দেব কেন, আমি যার কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছি তাকে দেব। সাধারণত নির্দিষ্ট কয়েকটা দিনের একটি ট্রানজিট পিরিয়ড থাকে বদলীর সময় সেটা প্রায় শেষের পথে এবং এটা শেষ হলে কাগজ কলমে প্রমান হবে যে আমি সময় মতো কর্মস্থলে আসিনি এবং দায়িত্বভার বুঝে নেইনি। এটি অদায়িত্বহীনতার পর্যায়ে পড়ে।

সিভিল সার্জনের অফিসে গিয়ে বিষয়টি জানালাম তিনি ভারপ্রাপ্ত আরএমও (এম ও) কে ডাকলেন এবং তিরস্কার করলেন আমার সামনে এই বলে যে-আপনার ওজন যদি চার আনা হয় আরএও এর ওজন বারোআনা।-তাকে এখনই দায়িত্ব দিয়ে দেন।
দায়িত্ব পেলাম কিন্তু নিজেকে মনে হলো ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। সকল ঢাল তলোয়ার আগে থেকেই সুপার সাহেব সরিয়ে ফেলেছেন এবং ব্যবহার করছেন কারন সুপার সাহেব শুধু সুপার হতে চান না পাওয়ারও চান।

ইনুভিক, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent