সোমবার - মে ২০ - ২০২৪

ব্ল্যাক ফ্রাইডে, রিয়েলি ব্ল্যাক!

ব্লাক ফ্রাইডের প্রস্তুতি শেষে ছবিফিটেড হাওয়াই

ভোররাত পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠবো বলে এর্লাম দিয়েছিলাম। কিন্তু ঘুম ভাংলো সকাল দশটায়। কপাল মন্দ হলে যা হয়। প্ল্যান করেছিলাম প্রয়োজনীয় কিছু ইলেকট্রনিক গেজেট কিনবো, সেটা বুঝি হলো না! বৃহস্পতিবার মধ্যরাত হতে মানুষজন শপিংমল ও স্টোরগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।এখন বের হলে বড় বড় শপিংমল, স্টোরগুলোতে কিছু পাব কিনা যথেস্ট সন্দেহ রয়েছে।
ঘুম ঘুম চোখে উইন্ডোর পর্দা সরিয়ে দেখি বৃষ্টি পড়ছে। গতকাল থেকে মন্ট্রিয়েলের আকাশ মেঘলা ছিল। রাত থেকে থেমে থেমে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। তাপমাত্রা মাইনাস ফোর। তীব্র ঠান্ডা বাতাসে হাড় কাঁপানো শীত চাকুর মতন শরীরে বিঁধে। এরকম আবহাওয়ায় বের হতে কি ইচ্ছে করে?
আমার কাছে লেপমুড়ে শুয়ে থাকার এটাই পারফেক্ট সময়। কিন্তু গোটা নর্থ আমেরিকাজুড়ে চলছে ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এদিনে মানুষজন কি ঘরে থাকে?
অগত্যা বের হতে হলো। দেখা যাক কপালে কি আছে।
বিগতদিনের ব্ল্যাকফ্রাইডেগুলোতে দেখেছি মধ্যরাত থেকে শপিংমল ও বড় বড় স্টোরগুলোর সামনে মানুষজনের দীর্ঘ সারি। দোকানপাট খোলামাত্র কে কার আগে প্রবেশ করবে তা নিয়ে রীতিমতন মল্লযুদ্ধ হয়। এই দিনটি আমেরিকা-কানাডায় কেনাকাটার জন্য বিশেষ দিন। সবখানে দেয়া হয় ব্যাপক ছাড়। দোকান খোলা ও বন্ধ রাখার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।
কোভিড মহামারীর পর প্রথম ব্ল্যাক ফ্রাইডে। অনেকদিন পর সস্তায় কিংবা নামমাত্র মূল্যে জিনিস কেনার সু্যোগ পাওয়ায় মানুষের মাঝে উচ্ছাস একটু বেশী মনে হলো। এমনিতেই কানাডা-আমেরিকায় ব্ল্যাক ফ্রাইডে এটি এমন একটা দিন, যেদিন লোকজন এমন পাগলের মতো কেনাকাটা করে। দেখলে মনে হবে যেন তারা হাতাহাতি লড়াই প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
কানাডায় মুলতঃ নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবারকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে বলা হয়। আমেরিকায় থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’র ঠিক পরের দিন হল ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এদিন বেশীরভাগ আমেরিকানরা ছুটির দিন হিসেবে উপভোগ করে। যদিও এটা সরকারী কোন ছুটির দিন নয়। কেউ কেউ এটিকে ক্রিসমাস শপিংয়ের মরসুমের শুরু হিসেবেও বিবেচনা করে। আগেই বলেছি, ব্ল্যাক ফ্রাইডে’তে শপিংমল, স্টোরগুলি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য নানা রকম মূল্যছাড় দেয়। এদিনের শুরুটা হয় কাকডাকা ভোরে প্রায় সব দোকানপাট খুলে যায়।আমেরিকায় কিছু কিছু দোকান বা মল থ্যাঙ্কসগিভিং ডে’র সন্ধ্যা থেকে সারা রাত ধরে খোলা রাখে, যাতে গ্রাহকরা অনেক সময় জুড়ে কেনাকাটা করতে পারেন। এমনকি দোকানের দরজা খোলার জন্য বাইরে হাজার হাজার অপেক্ষমাণ মানুষের ভিড় দেখা যায়। তবে বিড়ম্বনা শুরু হয় যখন ক্রেতারা তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি পেতে হুড়োহুড়ি শুরু করে। এসময় ভীড়ের চাপে অনেকেই আহত হয়। স্বল্পমূল্যের পছন্দনীয় আইটেমগুলি কিনতে চরম বিশৃঙ্খলার খবর একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা। এক হিসেবে দেখা যায়, আমেরিকায় থ্যাঙ্কসগিভিং সপ্তাহান্তে ক্রেতারা গড়পড়তা ৪১০ ডলার করে খরচ করে। কানাডায়ও এই খরচের অংক একেবারেই কম নয়।
ব্ল্যাকফ্রাইডের গোড়ার ইতিহাস হচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উত্তরণের চেস্টার ইতিহাস। ১৮৬৯ সালের দিকে আমেরিকায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল, সেই সময় মন্দা থেকে উত্তরণের উদ্দেশে একটি বিশেষ দিবসের কথা ভেবেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তারা পণ্যে বিশেষ ছাড় দেন। কোনো কোনো ইতিহাসবিদের মতে, ওই ছাড়ে তাদের অনেক লস হয়।কিন্তু স্টক ক্লিয়ারেন্সের জন্য তারা এটাকে পারফেক্ট ডে হিসেবে বিবেচনা করে। পরে দিনটি ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সাধারণত ব্যবসায়ীরা ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’তে পণ্য বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করেন। ওই দিন ৭০ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দেওয়ার নজিরও রয়েছে। ন্যূনতম এক ভাগ হলেও ছাড় দেওয়া হয়। মূলতঃ ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের বড়দিন উপলক্ষে কেনাকাটা ওই দিন থেকে শুরু হয়। সে উপলক্ষেই এ ছাড়।
অনেক পরে দিনটি ব্ল্যাকফ্রাইডে হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫০ সালে ফিলাডেলফিয়া রাজ্য পুলিশ ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’র পরের দিনকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামে অভিহিত করেছিল। কারণ এই দিনে আমেরিকায় বছরের সবচেয়ে বড় লেনদেন হতো, অই সময় অনুষ্ঠিত হতো সবচেয়ে উত্তেজনাকর ফুটবল আসর। তখন হতে আমেরিকার পাশাপাশি কানাডায়ও ব্যবসায়ীরা বড়দিনকে সামনে রেখে বিশেষ মূল্যছাড় দেয়া শুরু করে। কালক্রমে এ দিনটি সারা নর্থ আমেরিকাজুড়ে কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠে। মানুষজন সারাবছর বিশেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। এদিন ছাড়াও আরেকটি দিনের মানুষ অপেক্ষা করে, সেটি ২৫ ডিসেম্বর বক্সিং ডে। এই দুই দিবসকে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস আর কেনাকাটার ধুম পড়ে, যা সত্যি দেখার মতন।
এখন অবশ্য ব্ল্যাক ফ্রাইডে’র বিজনেস ভার্চুয়ালি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অনলাইন প্লাটফর্ম হচ্ছে আমাজন এবং আলিবাবা।
দেরীতে ঘুম থেকে উঠে নিহন এলেক্স শপিংমল, বেস্ট বাই, জারা, এইচ এন এম, গ্লোব, এলডো শপিং সেন্টারে গিয়ে পছন্দের পন্য খুঁজে না পেয়ে মন খারাপ হলো।সাড়ে এগারোটা হতে ঝিরিঝিরি স্নো পড়ছে। তবুও শপিংহোলিক মানুষের দিগ্বিদিক দৌড়ানো থামছে না। কে আর আগে এক স্টোর হতে অন্য স্টোরে যাবে তার প্রতিযোগিতা চলছে। এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে আমার নেইবার খুরশীদভাইকে বললাম, চলেন আল তায়েবে লাঞ্চ সেরে বাসায় ফিরে যাই ।
বেচারীরও মন খারাপ। ভাল একটা ক্যামেরা কেনার ইচ্ছে ছিল। সেটা বেস্ট বাইতে পেয়েছিলেনও। তিনি ক্যামেরাটা ধরার আগেই একজন ছোঁ মেরে নিয়ে নেন। পরে অবশ্য একটা ম্যাকবুক কিনেছেন পানির দামে। কিন্তু আমি খালি হাতেই বাসায় ফিরছি।
এবারের ব্ল্যাক ফ্রাইডে আমার জন্য ব্ল্যাক হয়ে গেল!

মন্ট্রিয়েল, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent