শনিবার - জুলাই ২৭ - ২০২৪

রাস্তায় দাঁড়াবেন না

নিচের ছবিটি ডেনফোর্থে এক ব্যবসায়ী তার গ্রোসারি সপের সামনে ব্যানার ঝুঁলিয়েছে অনুরোধ করেছেন দয়া করে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গল্প করবেন না

অন্য একটি দেশে গিয়ে সেখানে সেটেলড হতে চাচ্ছেন কিন্তু শুরুটাই যদি হয় মিথ্যার আশ্রয় দিয়ে তাহলে আস্থার জায়গাটি আর থাকলো কোথায়? ভিজিটর ভিসা বলতে আমি যতটুকু বুঝি একজন একটি দেশ ভিজিট করতে আসবেন এবং ভিজিট ভিসা শেষে নিজে দেশে ফিরত যাবেন। যিনি invitation letter দিয়ে কাউকে যখন ভিজিটর হিসাবে আমন্ত্রন করেন সেই আমন্ত্রন পত্রেও লেখা থাকে নিদিষ্ট সময়ের পর ভিজিটর দেশে ফেরত যাবেন।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে ভিজিটর নিজ দেশে ফেরত না গিয়ে এখানে রিফিউজি ক্লেইম কিংবা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে ভিজিট করতে আসা দেশটিতে থেকে যাওয়ার জন্য এক ধরনের আইনী প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিচ্ছেন। আপনার ক্লেইম জেনুইন হলে এই ক্লেইম নিজ দেশ থেকেই করা যেতো । কিন্তু সেটি না করে আপনি দেশটিতে ভিজিটর ভিসা নিয়ে প্রবেশ করে রিফিউজি ক্লেইম বা রাজনৈতিক আশ্রয় চাচ্ছেন। প্রথমেই কিন্তু আপনি দেশটিতে প্রবেশ করে ভিন্ন একটি পথ বেছে নিলেন। আপনি হয়ত আপনার lawyer দিয়ে দেখাবেন আপনি দেশে নিরাপদ নন, আপনার জীবন হুমকির সম্মুখীন, আপনি দেশে ফেরত গেলে আপনাকে মেরে ফেলা হবে। আপনি কিংবা আপনার lawyer আপনার আবেদনের পক্ষে কিছু ডকুমেন্টস সাবমিট করবেন। তার উপর হেয়ারিং হবে বেশ কয়েকবার। আপনি রিজেক্টেড হতে পারেন আবার আপনার আবেদন এপ্রুভও হতে পারে।

- Advertisement -

আমি বলছি না আপনার ডকুমেন্টসগুলি বানানো।তবে শুনেছি বানানো বা ফেইক ডকুমেন্টসও থাকে। এই উদারনৈতিক মানবাধিকারের দেশগুলি আপনার সাবমিট করা ডকুমেন্টসগুলি অনেক ক্ষেত্রেই গুড ফেইথে নিয়ে নেয়।

গুড ফেইথে নেওয়া ডকুমেন্টসগুলি যদি ভুয়া হয়ে থাকে এবং আপনি যদি তার দ্বারা এপ্রুভাল পেয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনি একটি দেশে মিথ্যার আশ্রয় দিয়ে শুরু করলেন। সেক্ষেত্রে দেশটিতে হয়ত থেকে যেতে পারবেন কিন্তু সব সময় বিবেকের কাছে দায়ী থাকবেন।

শুনেছি আজকাল দেশে নাস্তিক ছিলেন,সেই কারনে আপনার জীবন হমকির মধ্যে আছে। এই সব দিয়ে খুব সহজেই ক্লেইমকে establish করা যায়। আরো শুনেছি, আপনি ভিন্ন একটি লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারনে দেশে ভিষণভাবেই বুলিং আর বৈষম্যের শিকার, দেশে থাকলে আপনি আর বাচবেন না, এমন ডকুমেন্টস তৈরি করা খুব একটা কঠিন নয়। আর ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কারনে দেশে শাসক দল আপনাকে যে কোন সময় হত্যা করতে পারে, এমন ডকুমেন্টসও establish করা অসম্ভব নয়।

কিছু দিন আগে শারুখ খানের একটি মুভি দেখেছিলাম ” Dunki।” ইংল্যান্ডে কিছু ভারতীয় অবৈধ পথে গিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিলো, স্বপ্নের দেশের সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে, অনেক পাউন্ড কামাবে, দেশে আত্নীয় পরিজনের জন্য অর্থ পাঠাবে। সেখানে তারা পুলিশের চোখকে ফাকি দিয়ে বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করে থাকতো। একজনকে দেখা গেছে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে ভিক্ষা করছে। কেউ একজন ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলো। অনেক স্ট্রাগলের পর তারা সেখানে বৈধ হয়েছিল। কিন্তু মুভির শেষে মনে হয়েছে, যে সোনার হরিনের পেছনে তারা সারা জীবন ছুটে ছিল সেই সোনার হরিন অধরাই থেকে গেছে। নিজ দেশের মতো শান্তি আর কোথাও নেই। এভাবে ডাংকি মেরে অন্য দেশে যাওয়া যায় ঠিকি কিন্তু শান্তি খুজে পাওয়া যায় না।

কানাডা নামক দেশটি মানবাদিকারের দেশ। তারা আপনার এই সব ক্লেইম শুনবে।এমনকি মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে এই দেশে সব ধরনের সাহায্য দিবে। ফ্রি মেডিকেল,চলার জন্য লাম সাম ভাতাও দিতে পারে।আপনিও হয়ত যতদিন হেয়ারিং চলবে ততদিন চলার মতো একটি ক্যাশ জবও পেয়ে যেতে পারেন৷ ক্যাশ জবের সাথে ভাতাটা থাকলে একজন সিংগেল পার্সনের পক্ষে ভালো ভাবেই থাকা সম্ভব।

কথা হচ্ছে, এই যে দেশটি আপনার জন্য এত কিছু করছে বিনিময়ে আপনারাও উচিত দেশটির আইন, দেশটির আচার প্রথা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। অযথা কোথাও দাঁড়িয়ে ভিড় না করা। মনে রাখতে হবে যে দেশটিতে এসেছেন সেই দেশটি আপনার ফেলে আসা দেশের থেকে অনেক ভিন্ন। কথায় আছে না, “যখন রোমে থাকবেন, রোমানদের মতো আচরন করবেন।”

নিচের ছবিটি ডেনফোর্থে এক ব্যবসায়ী তার গ্রোসারি সপের সামনে ব্যানার ঝুঁলিয়েছে। অনুরোধ করেছেন ” দয়া করে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গল্প করবেন না।” এই অনুরোধটি খুব স্বাভাবিক। একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের entrance এর সামনে দাঁড়িয়ে জটলা পাকিয়ে গল্প করলে ক্রেতারা ওই গ্রোসারি সপে আসতে চাইবে না।

অনেক কিছু বেআইনী না কিন্তু প্রথাগত, আচারগত। সেগুলোও মান্য করা উচিত।

তাই নতুনদের প্রতি অনুরোধ, এই সব বিষয় একটু খেয়াল রাখবেন। আর বেশি কিছু বলার নাই।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent