রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

ক্রিস্টমাস ডিনার

ক্রিস্টমাস ডিনার

আমাদের ক্লিনিক এর পক্ষ থেকে খ্রীস্টমাস ডিনার খীস্টমাসে করা হয়ে উঠেনি প্রচন্ড বাস্ততায়।বছরের শেষে ছিল রুগীদের বিরাট চাপ।স্বাস্থ্যবীমা শেষ হয়ে যায়, নুতন বছরে আবার নুতন বীমা। ফলে বছরের শেষ মাসে রুগী সামাল দিতে গিয়ে ক্লিনিক থেকে সবাই এক সাথে যে ডিনার আর করা হয়ে উঠেনি। এরি মাঝে এর সময় হয়তো ওর হয় না। অবশেষে হল সেই ডিনার জানুয়ারির রবিবারের এক বিকেলে। কিছুটা আরলী ডিনার।

আমেরিকান ডিনার!

- Advertisement -

নামেই হুল্লোড়। প্রথমেই আ্যাপিটাইজার। তবে এক এক রেস্টুরেন্টের এক একটা বিশেষ আইটেম থাকে। কমন হলো চিকেন উইংস সাথে নানান নামের সস। আমি নাম জানি শুধু রেঞ্চ, সুইট এন্ড সাওয়াব, হানি মাস্টারড। চিকেন উইংস ডীপ ফাই, বেক বা সস দিয়ে মাখানো ভাজা। পটেটো ফ্রাইস সাথে চিজ। চিংড়ী মাছ বেক অথবা ফ্রাই।পেয়াজ ভাজা। রোলও থাকে। আমরা যেটাতে গিয়েছিলাম সেটার বিশেষ আ্যপিটাইযার ছিলো ব্লুমইন অনিয়ন। বিশেষ কায়দা করে হাতে কার্ভ করে ফুলের তোড়ার মত করে বানিয়ে সোনালী করে ভাজা।দিবে ইয়া বড় প্লেটে সাথে হাবি জাবি। আর কমন হল গার্লিক ব্রেড। সত্যি বলতে,নরম তুলতুলে গরম গরম সেই গার্লিক ব্রেড,বাটার মাখিয়ে খেয়েই আমি ফুল হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকি। আর ভালো লাগে না বাদবাকি খাবার।যার যার পছন্দ মত ড্রিংকস। মেয়েরা তরল পানীয় নেয়। স্প্যানিশ সিগনেচার পানীয়

“সাংরিয়া”, ” টেকুইলা” নিলো যারা ছিলো।আনন্দ নিয়ে ।বড় গ্লাসে উপরে লেবুর ফালি লাগানো, বরফের কুচি দেয়া গ্লাসটি এই ঠান্ডায় ধরতে গেলেও সংকুচিত হয় আমার হাত।আমাদের মেয়েরা হেসে লুটোপুটি করে পান করছে।স্টবেরী, কিয়ি, লেমোনেইড নিয়ে আমি জমে গেছি।আর ওদের আনন্দ দেখছি উপভোগ করছি।।

আমাদের সাথে আর একজনকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ছিলো।

নার্স প্র‍্যাক্টিশনার শ্বেতাঙ্গ লরেন এসেছে তার কৃশাঙ্গ ছেলে বন্ধু নিয়ে।এলিযাবেথ এসেছে তার স্বামীর ভাই এর ১৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে। রেজিস্ট্রার্ড নার্স মিশেল এসেছে তার ১৬ বছরের ছেলেকে নিয়ে। চাইনীজ ডাক্তার এসেছে ৮০ বছরের বাবাকে নিয়ে। ক্যারেন,ডেইজী আর আমি একাই গেছি। আমার বর শুভ্রকে নেয়া আর হিমালয় পর্বতে আরোহন করা একেই কথা।তবে পুত্র অর্নিন থাকলে যেতো। সেতো পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটিতে।

এপিটাইযার পর্ব শেষ হতেই শুরু হল আসা মেইন ডিশ।যে যেটা অর্ডার দিয়েছিলো। স্টেক আজকের বিশেষ আইটেম। বোন ইন রিবেয়া, কাট সিরলোইন, চিকেন এন্ড স্রিম প্যাসতা উইথ আলফ্রেডো সস সাথে থাকে দুইটা সাইড আইটেম।বেক পটেটো, সিজন্যাল ভেজিটেবল, ব্রকলি, আ্যাসপ্যারাগাস, স্যালাড। দেখা যায় খাবার যতনা খায় ফেলে তার থেকে দ্বীগুন। বুকের ভিতরটা মোচড় দেয় এই ভাবে অপচয় দেখলে।

সব শেষে ডেজার্ট। চকলেট কেক,আইস ক্রীম।যার যেটা ইচ্ছে।

খেতে না পারলে সাথে নিয়ে নাও।ডিনারে দাওয়াত দুই জনের।

শুভ্র যায়নি ফলে ওর জন্য বোন ইন রিবেরা সাথে মিক্সড ভেজিটেবল অর্ডার করে টু গো করলাম।বলে দিলাম অয়েল ডান যেনো হয়। হাফ ডান বলে একবার ধরা খেয়েছিলাম। আর আমার নেয়া গোল্ডকোস্ট কোকোনাট স্রীম উইথ আ্যসপারাগাসও বক্স এ করে সাথে নিয়ে নিলাম।

খাওয়া চলছে,ডাক্তার ক্লিনিকের সব কিছুই ডিসকাস করছে।পেশেন্টদের সার্ভিস দেয়ার ব্যাপারে সবাই ১০০ তে ১০০. এটা আমার কাছে খুব ভাল লাগে। এই নৈতিক শিক্ষাটা প্রকট ভাবে সবার মাঝেই আছে। চুড়ান্ত ভাবে সচেতন আর সচেস্ট। না করলে চাকরি থাকবে না তা নয়, সবার ভিতরেই নীতিবোধটা প্রবল।ডাক্তার নাম ধরে ধরে সবার স্টং সাইড, দুর্বল সাইড বলছে। আমি ঝিমাই তখন। স্বাস্থ্যসেবার এই পেশায় ২০ বছরের এই কর্মজীবনের অভিজ্ঞতায় এই আমি। তবুও শুনি কি বলে। নুতন নুতন টেকনিক,টেকনোলজি নিতে ভালোই লাগে। শিখতে আমার দেরী হয় তবে আনন্দ হয় কিছু জানা হলে। শুধু বিশ্বাস করি সবেই নির্ধারিত। যা হবার হবেই.. এটাই আমার দর্শন।জীবন থেকে এই শিক্ষাই পেলাম।

আমাদের এই খাবার, কথোপকথনের এর মাঝেই চারদিক থেকে শুনা যেতে লাগলো পুলিশের সাইরেন। চারদিক কাঁপিয়ে সাইরেন বাজছে। ভিতর থেকেই দেখতে পাচ্ছি পুলিশের গাড়ি আর সেই গাড়ি থেকে ভৌতিক সব আলোর বিচ্ছুরণ। অনেক গাড়ি, অনেক উত্তেজনা। মেয়েরা বলাবলি করছিলো, হয়ত কেউ পানীয় পান করে চিৎপটাং।তাকে নিতে এসেছে। কিন্তু আমার মনে হল অন্য কিছু। বোঝা যাচ্ছিল না। কেয়ারিং ডাক্তার খোঁজ নিয়ে বের করলো,এর মাঝেই হাইওয়ে বন্ধ। আমরা কোন রুট দিয়ে বের হবো বলে দিল। অনেকক্ষন ধরেই চললো পুলিশের অস্থিরতা। আমরাও ডিনার শেষ করে হীমের রাতে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।আমি ছিলাম লিজের গাড়িতে।

একা গাড়ি নিয়ে যেতে ইচ্ছে করেনি। লিজ গাড়িতে উঠেই রেডিও অন করলো। শুনতে পাচ্ছি, কিছুক্ষন আগেই আশে পাশের কোন এক জায়গায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে কেউ একজন এবং সেই পুলিশ নিহত হয়েছে। পরিস্কার হল…

কেন ছিলো পুলিশের সাইরেন।কেন ছিলো এত উত্তেজনা।

মনটা বেদনায় ছেয়ে গেলো।

আমাদের ডিনার আর আর পাশেই হল মৃত্যু।

আহারে,কি ঠুনকো এই জীবন!! কার জীবন প্রদীপ নিভে গেলো

সাথে গেলো অন্যর স্বপ্ন।ভালোবাসা।শুন্যে হল বাড়ি। শুন্যে হলো মায়ের কোল। আর আমরা ফিরলাম হাতে খাবারের বক্স নিয়ে।

জীবনটা আসলেই অদ্ভুত।

জীবন আর মৃত্যু হাত ধরেই হাঁটছে।

আমাদের মনে সেটা যে থাকে না।

- Advertisement -

Read More

Recent