শনিবার - জুলাই ২৭ - ২০২৪

একগুচ্ছ শুকতারা

একগুচ্ছ শুকতারা

বারান্দায় দাঁড়িয়ে তারা দেখছে পার্থিব। মুখে লেগে আছে অমায়িক এক হাসি। তারা দেখার মাঝেও এতো আনন্দ আছে? এতো আনন্দ কেন লাগে? শ্রুতি পছন্দ করে বলে? ধীরে ধীরে কী তবে শ্রুতির পছন্দ সে নিজের মাঝে নিয়ে নিচ্ছে? পার্থিবের আকাশ-পাতাল ভাবার মাঝেই ঘরে ঢুকল শ্রুতি। পার্থিব শব্দ পেয়ে তাকাল। শ্রুতিকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে কেমন হয়? রাগ করবে? থাপ্পড় দিবে? নাহ….এমন কিছুই হয়তো করবে না। তবে ছেলেদের প্রতি বিদ্বেষ হয়তো আরোও তীব্র হবে কারণ তার বউ তিল কে তাল বানানোতে ওস্তাদ।

‘শ্রুতি, এখানে আসুন।’

- Advertisement -

শ্রুতি এগিয়ে এলো, ‘কী সমস্যা?’

পার্থিব হাত ধরে শ্রুতিকে টেনে নিয়ে এলো। এরপর দুই বাহুতে হাত রেখে ওকে মোড়ায় বসিয়ে দিল। গ্রিলের ওপর থেকে কিছু ১ টা নিয়ে শ্রুতির হাতে পরিয়ে দিল। শ্রুতি দেখল। বিরক্ত ফুটিয়ে প্রশ্ন করল, ‘এইসবের মানে কী পার্থিব? এইভাবে বার বার চুড়ি পড়ানোর মানে কী? কী পান এইসব করে? কিছুদিন আগেও নতুন চুড়ি পড়ালেন।’

সরল গলার উত্তর, ‘আমার ভালো লাগে শ্রুতি। শ্রুতিকে সাজাতে পার্থিবের ভালো লাগে। দেখুন কী সুন্দর লাগছে…’’

‘মোটেও সুন্দর লাগছে না। কালো হাতে একদমই মানাচ্ছে না উলটো খুবই বাজে দেখাচ্ছে। তাই এইভাবে মিথ্যা বলা থামান পার্থিব। আপনার মিথ্যা কথায় আমি গলছিনা।’ শক্ত কণ্ঠে বলে দিল শ্রুতি।
পার্থিব এইবার ভীষণ বিরক্ত হলো। কঠিন চোখে তাকিয়ে রইল শ্রুতির দিকে। ভরাট কণ্ঠে প্রশ্ন করল, ‘আপনার আপাও তারমানে অসুন্দর, কুৎসিত? আমার মা, সেও তো তথাকথিত ফর্সা নয়। এরমানে সেও অসুন্দর। তাহলে তাকে বাবা এতো ভালোবাসে কেন?’

‘এখানে তারা আসবে কেন?’

‘কারণ আমি নিয়ে এলাম তাই এলো। আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনার আপাও অসুন্দর?’

‘মোটেও না। ও অনেক সুন্দর। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে আমার আপা। আপনি তাকে নিয়ে ১ টাও বাজে কথা বলবেন না পার্থিব।’

শ্রুতির চোখে পানি। রাগে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। পার্থিব এবার নিভে গেল। মেয়েটার চোখে পানি দেখতে ভালো লাগেনা। খারাপ লাগে, মায়া হয়। ইচ্ছে করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, জড়িয়ে ধরতে। যেহেতু ইচ্ছেগুলো পূরণ করা সম্ভব নয়, এরচেয়ে ভালো কান্না থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

পার্থিব শ্রুতির হাত ধরল। শান্তচোখে চেয়ে বলল, ‘আচ্ছা মেনে নিলাম আপনার আপা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী। কিন্তু সে তো কালো। তাও আপনি তাকে এতো ভালোবাসেন কেন শ্রুতি? তাকেই কেন আপনার কাছে সবচেয়ে সুন্দর লাগে? আমার মা। তাকে কেন এতো ভালোবাসি আমি? আমার বাবাই বা তাকে কেন এতো ভালোবাসে?’

‘ভালোবাসতে সৌন্দর্যের প্রয়োজন হয়না পার্থিব।’ শান্তকণ্ঠে অতি মূল্যবান একটা কথা বলে, নিরবে তর্কের ইতি ঘটিয়ে চলে গেল শ্রুতি।

কথাটা শুনে পার্থিবের ঠোঁটে প্রকাশ পেল হাসির সরু রেখা। এই মেয়েকে নিয়ে কই যাবে পার্থিব? যেই কথা পার্থিব এতোদিন ওকে বুঝানোর চেষ্টা করেছে, সেই কথাই সে অন্যদের বেলায় খাটাচ্ছে। শুধু তার বেলাতেই নেই। কপালই খারাপ।
.
মাহাথির অফিসে চলে গেছে অনেকক্ষণ হয়। পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে ঘুরে দেখছে বিভা। অতো শৌখিন জিনিসপত্র নেই, সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘর যেমন হয় তেমন। এখানে বিভার অসুবিধা হওয়ার কথা, অথচ বিভার একটুও অসুবিধা হয়না। উলটো আলাদা প্রশান্তি আসে। মনে হয় নিজের বাড়ি। যেমনই হোক, কিন্তু নিজের। ওই বাড়ি থেকে প্রায়ই আমিন শিকদার বেরিয়ে যেতে বলত। কিন্তু কোনো কারণে বের করত না। হয়তো ভালোমানুষ সেজে থাকার জন্য। বিভা চেয়েও বের হয়ে আসতে পারত না। কী করবে বের হয়ে, কোথায় যাবে ৩ ভাই-বোন মিলে? যদিওবা বিভা ছোটখাটো ১ টি অনলাইন ব্যবসা করে, তবুও সেখান থেকে কত টাকাই বা আসবে? তার উপর হামিমকে ডাক্তার দেখানো।

তবে এই সাড়ে ৮ বছরে ওদের পেছনে যত টাকা খরচ করা হয়েছে সেই টাকার একটা বড় অংশ হলো তাহিরার রেখে যাওয়া টাকা। তাহিরা ৩ ভাই-বোনের নামে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে রেখেছিলেন ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু সেই ভবিষ্যত তাহিরা নিজেই ধূলিসাৎ করে গেছিলেন আমিন সাহেবের নামে রেখে। যখন বুঝতে পারল, তখন খুব বেশি দেড়ি হয়ে গেলো।

বিভা ভাবল ওই বাসার সব কিছু নিজের থেকেও ছিল পরের। কারণ শাহিনা।

আর এই বাসায় সবকিছু পরের হয়েও নিজের। কারণ মাহাথির।

বিভা তার ছোট্ট সংসার টা তো আগলে নিল, শুধু মানুষটাকেই আগলে নিতে পারল না।
.
রুমে ঢুকে অবাক হয়ে গেল বিভা। মাহাথির অফিসে যাওয়ার পর এতোক্ষণপর রুমে ঢুকল সে। একি অবস্থা রুমের! জামা-কাপড় ছড়ানো ছিটানো। সব দেখি তার জামা। আলমারি থেকে এইভাবে ফেলল কে? সে তো সুন্দর ভাবেই রেখেছিল গুছিয়ে।

বিভা জামাগুলো তুলে আবার ভাঁজ কর‍তে শুরু করল। এরপর সুন্দর করে মাহাথিরের জামা-কাপড়ের পাশে রেখে দিল। বিভা আন্দাজও করতে পারল না, সে যতো যত্নের সাথে কাপড় গুলো রাখল, ঠিক ততোটাই নিষ্ঠার সাথে কেউ আলমারি থেকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে তার কাপড়।

- Advertisement -

Read More

Recent