রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নামে মন্ট্রিয়েলের সড়ক

ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর শ্রেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্য অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অনতিদূরে রয়েছে ম্যাকগিল মেট্রোস্টেশন<br >ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্কটিশ বংশোদ্ভূত জেমস ম্যাকগিলের নামে স্টেশনটির নামকরণ করা হয়
ডিসেম্বরজুড়ে অবিরাম তুষারপাত হবে, বড়দিনের আগে চারিদিক শ্বেতশুভ্রতায় ছেঁয়ে থাকবে, খৃস্টধর্মাবলম্বীরা এমনটি আশা করেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ভোর থেকেই সারাদিন ঝিরিঝিরি স্নো পড়েছে। খৃস্টধর্ম বিশ্বাসীরা মনে করেন, হোয়াইট ক্রিস্টমাস মানে সৌভাগ্য বয়ে আনবে।
মেরি ক্রিস্টমাসের সারাদিন স্নো পড়ায় বাসা হতে বের হইনি। বিশেষ কাজে সন্ধ্যায় প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে সেনেগালের বন্ধু শেরিফসহ গিয়েছিলাম প্লেস দ্যা আর্টসে । মেট্রো হতে নেমে এভিনিউ মেজেনভ যেতে চোখ আটকে গেল দেয়ালে। বড় বড় প্রিন্টেড পোস্টারে। কানাডার বিখ্যাত সব মনীষীদের ছবি ও ছোট আকারে জীবন বৃত্তান্ত লেখা । খুব কৌতুহল নিয়ে দু’চারটি লেখা পড়তে না পড়তে শেরিফের তাড়া।
চলো আগে কাজটি শেষ করি আসি। যাবার পথে না হয় দেখো।
আচ্ছা।কিন্তু ফ্রেঞ্চ ট্রান্সলেট করে আমাকে বলতে হবে।
-ওকে।
হাতে সময় কম থাকায় দেখা হলো না।
ফেরার পথে শেরিফসহ মেট্রোস্টেশনের ভেতর ঢুকে সময় নিয়ে পোস্টারগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম । গত ৪ বছর মেট্রোতে যাতায়াতের কারনে জর্জ ভেনিয়ার ,ম্যাকগিল ,লিওলেন গ্লু , লাসাল,মনমরসি , ফন্টনাক ,শার্লেভোয়া ,এটওয়াটার,পাপিনো, জ্যান তালুন এসব নাম হাজারবার শুনেছি। কিন্তু এসব মেট্রো স্টেশনের নাম যে কানাডার বিখ্যাত জ্ঞানী গুনী – মনীষীদের নাম তা কখনোই বুঝতে পারিনি। প্রতিটি মেট্রোস্টেশনের নাম রাজনীতিবিদ, সামরিকযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক ও মনীষিদের নামকরন করে কানাডা তাদের শ্রেষ্ঠসন্তানদের সম্মান জানিয়েছে। সম্মান জানিয়েছে বিশ্বের গুনী মনীষিদেরও।
জর্জ ভেনিয়ার মেট্রোস্টেশনের পাশের রুয়ে সেন্টমার্টিনে একসময় আমি থেকেছি। জর্জ ভেনিয়ার যে কানাডার এক সামরিক অফিসার তা জানা ছিল না।আমার বর্তমান আবাসস্থলের সামনে এভিনিউ জ্যান তালুন। ১৬৬৫ সালে জ্যান তালুন ছিলেন কুইবেকের প্রিমিয়ার।
মন্ট্রিয়েলের প্রসিদ্ধ এভিনিউ হিসেবে পরিচিত শেরব্রুক এভিনিউ। স্যার জন শেরব্রুক (১৭৬৪-১৮৪০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ জেনারেল। যিনি নোভাস্কোশিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন। ১৮১৬ হতে ১৮১৮ পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশ শাসিত উত্তর আমেরিকার গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
লাসালে প্রায় যেতে হয় আমার ল’ইয়ারের কাছে। সেই লাসাল কোন ব্যক্তি বা গুনী মানুষের নাম হতে পারে তা কখনোই ভাবনায় আসেনি। পোর্ট্রেটগুলো দেখতে দেখতে লাসাল নাম ও ছবি দেখে চমকে উঠি।
আরে, এ ব্যক্তির নামের স্টেশনে কত শতবার গিয়েছি!
এই লাসালেই ভোলাদা’র বাসা।
লাসালের পুরো নাম রেনে-রবার্ট ক্যাভেলিয়ার, সিউর দে লাসালে। তিনি ছিলেন ১৭ শতকের একজন ফরাসি অভিযাত্রী। উত্তর আমেরিকায় অবস্থানকালে পশম ব্যবসায়ী হিসেবেও বেশ নামডাক কুঁড়িয়েছিলেন । অভিযাত্রী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার গ্রেট লেক অঞ্চল, মিসিসিপি নদী এবং মেক্সিকো উপসাগর আবিস্কার করেন।
কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনী এলাকার নাম হচ্ছে পাপিনো। এই নির্বাচনী এলাকাতেই আমার আবাস। ট্রুডো আমার এলাকা হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
পাপিনো নামে খ্যাত এলাকাটি যার নামে তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং সিগনিউরি দে লা পেটি-নেশনের জমিদার। তার পুরো নাম হচ্ছে লুই-জোসেফ পাপিনো। ১৭৮৬ সালে মন্ট্রিয়েলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৩৮ সালের নিম্ন কানাডা বিদ্রোহের আগে তিনি সংস্কারবাদী দেশপ্রেমিক আন্দোলনের নেতা ছিলেন। তার বাবা ছিলেন জোসেফ পাপিনো। তিনিও কুইবেকের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন।
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর শ্রেষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্য অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের অনতিদূরে রয়েছে ম্যাকগিল মেট্রোস্টেশন।
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্কটিশ বংশোদ্ভূত জেমস ম্যাকগিলের নামে স্টেশনটির নামকরণ করা হয়।
শেরিফ পোর্ট্রেটের পাশে ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা জীবনবৃত্তান্ত পড়ে আমাকে ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে শোনায়। আমি গভীর মনযোগে শুনি এবং ছবির মানুষগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার চেস্টা করি। মনমরসি, কার্টিয়ের, লরিয়ে, শার্লে ভোয়া, লিওলেন গ্লুক্স, ক্যাডিলাক,হেনরি ব্রোশোয়াসহ শ্রেস্ট সন্তানদের নামে মন্ট্রিয়েলের সড়ক ও মেট্রোস্টেশনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
প্যারিসেও আমি দেখেছি স্ট্যালিনগ্রাদ, ভলতেয়ার , হোচিমিন,লুই পাস্তুরসহ বিশ্বের অনেক বিখ্যাত জ্ঞানী-গুনী-মনীষীদের নামে তাদের অসংখ্য মেট্রো স্টেশনের নামকরন করেছে।
প্লেস দ্যা আর্টস হতে বের হয়ে মন খারাপ হলো আমাদের দেশের কথা ভেবে। ক্ষমতাসীনরা সারাদেশের সকল স্থাপনায় দলীয় প্রধানের নামকরণ করেন। আবার অন্যদল ক্ষমতায় এসে পূর্বের সব স্থাপনা থেকে সেইসব নাম মুছে ফেলেন। দেশে আজব এক সংস্কৃতি চলছে , যা খুবই দুঃখজনক।
মন্ট্রিয়েল, কানাডা
- Advertisement -

Read More

Recent