জুলাই মাসে বাংলাদেশে বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে অনেকেই নিষেধ করেছিলেন। কারন হিসেবে তারা বলেছিলেন এসময় বাংলাদেশে প্রচন্ড গরম থাকে, থাকে ডেঙ্গু মশার আক্রমন, আর পেটের পীড়া হওয়ার সম্ভবনা। এগুলোর কোন কিছুই আমলে না নিয়েই চলে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি কথা সত্য। প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম। ডেঙ্গু মহামারি শুরু হয়েছে পুরোদমে।
বিমানের টিকেট কেটে ফেলেছিলাম আগেই। আর বাচ্চাদের সামার ভ্যাকেশন বিবেচনায় জুলাই আগষ্ট মাসে যাওয়া ছাড়া কোন উপায়ও ছিলনা। গেলাম বাংলাদেশে। থাকলাম চার সপ্তাহের মত।
বাংলাদেশ বিমানে চড়ে যাওয়া ও আসা বেশ মজার ছিল। ভিতরে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সবকিছু, খুব আধুনিক এয়ারক্রাফট, ভালো বিনোদনের ব্যবস্থা, কেবিন ক্রদের ভালো আথিতীয়তা, ক্লিন বাথরুম–সবমিলে জার্নিটা ভালো ছিল।
বাংলাদেশে চার সপ্তাহ থাকা কালে আত্নীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবসহ অনেক লোকজনের সাথে স্বাক্ষাত হয়েছে। নিজের মা ও শ্বাশুরী দুজনেরই অনেক বয়স। বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থ্যতা তাদের আছে। তবে তাদের সাথে কাটানো সময় গুলো খুব ভালো ছিল। আশা করি শিঘ্রই তাদের সাথে আবারও দেখা হবে।
আত্নীয়ন স্বজন বন্ধুবান্ধব সবার আপ্যায়ন ছিল অভাবনীয়। যদিও সবার সাথে দেখা করা সম্ভব হয়নি।
চারি দিকে এত মানুষ। এত কথা। লোনলি ফিল করা অথবা ডিপ্রেশনে ভোগার কোন সুযোগ ছিলনা। এমন কি ফেসবুকে সময় কাটানোর ফুরসৎও ছিলনা। জীবিত মানুষের সাথে ইন্টারএকশন। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?
বাংলাদেশেরে মানুষের মধ্যে কী রকম যেন একটা বিশেষ শক্তি দেখলাম। সবখানে একটা ভ্রাইব্রেশন। সুন্দর ভাইভ। মানুষদেরকে মনে হল তারা খুব রেজিলিয়েন্ট। কোন কিছুই তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারছেনা। এত গরম, এত জ্যাম, এত ধুলাবালি, ভাঙ্গা নোংড়া পথঘাট, ফুটপাত, এত মানুষের ভিড়! তারপরেও মানুষ ছুটছে। থেমে নেই। মানুষের মধ্যে প্রচন্ড রকম একটা গতি অবলোকন করলাম।
কিছু নেগেটিভ দিকও লক্ষ্য করলাম। রাস্তায় কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। কেউ লেন মানেনা। লাইনে দাড়ালে একজন আরেকজনকে পাশ করে ঢুকে পরে। ধৈর্য্য কম মনে হল। সবখানে কেমন যেন শৃংখলা, স্বচ্ছতা আর দায়বদ্ধতার বড় অভাব।
গ্রামেগন্জে শহরে রিকশা চলছে ব্যাটারিতে। বাহনগুলো পরিবেশ বান্ধব সন্দেহ নেই। কিন্তুু প্রচন্ডরকম অনিরাপদ।
যেকোন মুহুর্তে দুঘর্টনা ঘটতে পারে। তারপরেও মানুষ চড়ছে। নিয়ন্ত্রন করার বা দেখার কেউ নেই।
সারাদেশে পাকা রাস্তাঘাট হয়েছে, হচ্ছে। আর সবখানে দালানকোঠা। চোখে পড়ার মত। সিরিয়াস ইকোনমিক গ্রোথ। কিন্তুু বেশীরভাগই অপরিকিল্পিত।
শহরের বিশালবিশাল হাইরাইজিং বিল্ডিং দাড়িয়ে আছে রাস্তার দুপাশে। কিন্তুু চলাচলের রাস্তার খুব সরু। বিল্ডিংগুলোর বেশীরভাগের নীচে কোন গাড়ি পার্কিয়ের ব্যবস্থা নেই। দালানে আগুন লাগলে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ঢোকার কোন সুযোগ নেই।
মনে শহরের পুরোটাই বাজার। সবখানেই কাচাবাজার, কাপড়চোপরের বাজার। মনে হল এগুলো নিয়ন্ত্রন করার বা দেখার কেউ নেই।
আরো মনে হল বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের মচ্চপ চলছে। নদীগুলো থেকে রীতিমত বালু ও মাটি তোলা হচ্ছে। নদী ও জলাধার ভরাট করে রাস্তা তৈরী করা হচ্ছে, দালানকোঠা তৈরী করা হচ্ছে। পরিবেশের তোয়াক্কা কেউই করছে না।
বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে পড়ার মত। সন্দেহ নেই। কিন্তুু দরিদ্রমানুষও অনেক দেখলাম। শুক্রবারে মসজিদের সামনে ভিক্ষুকের সারি দেখে খুব হতাশ হলাম। রাস্তায় ভিক্ষুকের হাতপাতা আগের চেয়ে মনে হল বেড়েছে।
এ জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারা আমার কাছে একটু অন্যরকম মনে হল। হয়ত সিরিয়াস অসম উন্নয়ন হচ্ছে। কিছুলোক দ্রুত বড়লোক হচ্ছে আর কিছুলোক আরো বেশী দরিদ্র হচ্ছে। ধনীগরিবের বৈষম্যের ফারাক কমানো বাংলাদেশের জন্য হয়ত বড় চ্যালেন্জ। অর্থনীতিবদগণ তা হয়ত ভালো বলতে পারবে।
বাংলাদেশকে মনে হল ডেভেলপমেন্ট পেইনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে সাময়িক পেইনটা হয়ত কেটে যাবে। কিন্তুু উন্নয়নটা হতে হবে ভারসাম্যপুর্ন। তা হলেই হয়ত তা টেকসই হবে।